চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, চর্বি একেবারে খাওয়া ভালো নয়। কথাটা সঠিক নয়। যা ভালো নয়, তা হলো সম্পৃক্ত চর্বি এবং ট্রান্সফ্যাট। গরু-খাসির মাংসের জমাট চর্বি, ঘি, মাখন, ক্রিম, পেস্ট্রি ও ডিপ ফ্রাই খাবারে আছে এ ধরনের ক্ষতিকর চর্বি। বাদ দিতে হলে এগুলো বাদ দিন। আর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মানে কেবল অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দেওয়া নয়।
বিজ্ঞানীরা ডিমকে একটি ‘পরিপূর্ণ খাদ্য’ বা কমপ্লিট ফুড বা সুপার ফুড হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ডিমের মতো এত স্বল্পমূল্যের প্রাণিজ আমিষ দ্বিতীয়টি নেই। মা, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের জন্য ডিম একটি আদর্শ খাদ্য। আমরা জানি, পুষ্টিহীনতার কারণে শিশুরা রাতকানা, রক্তস্বল্পতা, হাড্ডিসার হয়ে যাওয়া ইত্যাদি রোগে ভোগে। তাই মেধাবী জাতি গড়তে হলে ডিম খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। আমরা জানি, প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে ডিম অন্যতম। ডিমে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হূদরোগসহ অনেক রোগের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর। সাধারণ হিসেবে ১০০ গ্রাম খাসির মাংস থেকে যে প্রোটিন পাওয়া যায়, সেই একই পরিমাণ প্রোটিন মেলে ৪টি ডিম থেকে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নারীদের আ্য্যডোলেশন পিরিয়ডে বা পরবর্তীকালে সপ্তাহে কমপক্ষে ৬টি ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা প্রায় ৪৪ ভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আগে মনে করা হতো ডিমের কোলেস্টেরল মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং তা হূদরোগের ঝুঁকির কারণ। এখন আর সেই ভয় নেই। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কোলেস্টেরল পরিপাক ও শোষণের পর রক্ত বা রক্তরস পর্যন্ত পৌঁছায় না। আধুনিক বিভিন্ন গবেষণা তথ্যে জানা গেছে, সুস্থ ও সবলভাবে বাঁচার জন্য ডিম একটি পরিপূর্ণ খাদ্য। ডিম উচ্চরক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ডায়াবেটিস, স্তন ক্যানসার এবং মাইগ্রেনের ঝুঁকি কমায়। জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একদল গবেষক ২০১৭ সালের অক্টোবরে দাবি করেছেন যে, দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ডিম উৎপাদনেও তারা সফলতা পেয়েছেন।
ডিম বেশি খাওয়া কি ক্ষতিকর? সাদা অংশ ছাড়া কুসুম খাওয়া যাবে না? কারণ কোলেস্টেরল, প্রেসার, ডায়াবেটিস-কী করব? এমন অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। তবে এসব প্রশ্নের উত্তরে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের গবেষকরা বলেছেন, যদি সম্পৃক্ত চর্বি খাওয়া কমিয়ে দিতে পারেন, তবে সপ্তাহে ছয়টি ডিম খাওয়া খারাপ কিছু নয়। স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকায় ডিম হতে পারে নতুন সদস্য। ডিমে আছে উপকারী ওমেগা ৩ চর্বি, যা উল্টো রক্তনালি ও হূদযন্ত্রের জন্য ভালো। তাই পুষ্টি উপাদানহীন খাবার বাদ দিয়ে বরং ডিম খাওয়া ভালো। ডিমে প্রায় ১১ ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আছে, যা শরীরের জন্য দরকারি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভিটামিন ডি, যা বেশিরভাগ খাবারে অনুপস্থিত। ডিমে বায়োটিন নামের পদার্থও আছে, যা আজকাল অনেকে চুল পড়া কমাতে ক্যাপসুল হিসেবে কিনে খান। ডিমে আছে আমিষেরও চমৎকার মিশেল। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, চর্বি একেবারে খাওয়া ভালো নয়, কথাটা সঠিক নয়। যা ভালো নয়, তা হলো সম্পৃক্ত চর্বি এবং ট্রান্সফ্যাট। গরু-খাসির মাংসের জমাট চর্বি, ঘি, মাখন, ক্রিম, পেস্ট্রি ও ডিপ ফ্রাই খাবারে আছে এ ধরনের ক্ষতিকর চর্বি। বাদ দিতে হলে এগুলো বাদ দিন। আর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মানে কেবল অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দেওয়া নয়।
সাধারণত ৫০ গ্রাম ওজনের একটি ডিমে প্রোটিন থাকে প্রায় ৬ থেকে ৬.৫০ গ্রাম। এ ছাড়াও ডিমে থাকে ভিটামিন, খনিজ উপাদান, রঞ্জক পদার্থ ও সামান্য ক্যালরি। ডিমের কুসুমে থাকে চর্বি, যার ভেতরে বিদ্যমান কোলেস্টেরল। ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘কে’ আছে। এটি হাড় শক্ত ও মজবুত করে এবং প্রজনন অক্ষমতা দূর করতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস তাড়াতে ডিম দারুণ কার্যকর। সপ্তাহে চারটি ডিম খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। শিশুর হাড় গড়নে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর। ডিমে আছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।